যিকির খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার শায়েখ হাফেজ্জী হুজুর রহঃ বলতেন, ‘একটা সেকেন্ডও যেন যিকির থেকে খালি না যায়।’ এ কথার বাস্তব প্রতিবিম্ব ছিলেন তিনি। তার ঠোঁট সবসময় নড়ত। কুরআন বলে,
আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করুন। কিভাবে তাকে স্মরণ করবেন? অন্তরে না মুখে? আমার শায়েখ হাফেজ্জী হুজুর রহঃ বলতেন, জিহ্বার যিকির গুরুত্বপূর্ণ। অন্তরের যিকির একস্থানে স্থির থাকে না। এখন আপনি হয়তো চিন্তা করছেন, আপনি কবরে। আপনার অন্তর ভয়ে অস্থির। কিন্তু পরের মুহুর্তে আপনি ম্যানহাটনে চলে যাবেন। অন্তর স্থির থাকে না। এজন্য মুখে যিকির গুরুত্ব বেশি রাখে। যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি সবচেয়ে সহজও। দুনিয়ায় আমাদের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে জরুরি জিনিস কি? বাতাস। এজন্য আমরা কত টাকা খরচ করি? তারপরের জিনিস কি? পানি। তারপরের গুরুত্বপূর্ণ জিনিস কি? ভাত। অন্যান্য লাক্সারি আইটেমের তুলনায় এজন্য আপনি কত টাকা খরচ করেন? খুবই সামান্য। এরকম ইবাদাতের ব্যপারেও। সুবহানাল্লাহ । এটা মুখে বলা অনেক নেকির কাজ। সবাই জানে এটা। কিন্তু এটাকে খুব সাধারণ মনে করা হয়। এটা সাধারণ কোন কথা নয়।
হযরত বলেন, মক্কা শরীফে হযরত হাফেজ্জী হুযুুর রহমাতুল্লাহি আলাইহি এশরাকের নামাযের পরও দেড়-দুই ঘণ্টা নফল নামায পড়তেন। সালাম ফিরিয়ে বলতেন, ‘আমার পিয়াস লাগছে।’ হযরত পিপাসা শব্দটি জানতেন না। আমি পেছনে বসে থাকতাম। ফল, সেভেনআপ এগিয়ে দিতাম। একবার চিন্তা করলাম, হযরতের এক রুকুই যখন পনেরো মিনিট;এর মধ্যে ফল কিনে ফিরে আসা যাবে। ফল কিনে যখন মসজিদে ঢুকতে গেলাম, দারওয়ান বাধা দিল। আমি বললাম, هَذَا لِشَيْخٍ كَبِيْرٍ جِدًا। দারোয়ান বলে উঠলো, رُحْৃ. اللهُ كَبِيْرٌ। অর্থাৎ, তুমি একজন শায়েখকে কাবীর (كَبِيْرٌ, বড়) বলছো কেন? আল্লাহ সবচেয়ে বড়। দেখেন! শিরকের বিষয়ে আরবরা কত আপোষহীন। এই লোকের জানা ছিল না যে, মানুষের সাথে কাবীর শব্দটি ব্যবহার করা যায়। কুরআনে এর ব্যবহার রয়েছে।
হযরত বলেন, হযরত হাফেজ্জী হুযুুর রহমাতুল্লাহি আলাইহির বিনয় ছিল অকল্পনীয়। খুব কম কথা বলতেন। বেশিরভাগ সময় হয় নামায, তিলাওয়াত অথবা যিকির করতেন। আমার সৌভাগ্য হয়েছে হাফেজ্জী হুযুুর রহমাতুল্লাহি আলাইহির খাদেম হয়ে তার জুতা নিয়ে ঘোরার। একটু সময় পেলেই হযরত নামাযে দাঁড়িয়ে যেতেন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। নামায পড়তে চাইলে বলতেন, ‘জায়নামাযটা আছে নি?’ খাদেমের কাছে জায়নামায সবসময়ই থাকত। তবুও এটা বলতেন না ‘জায়নামাযটা দেন!’ কখনোই সরাসরি নির্দেশ দিতেন না। তাবলীগের ভাইয়েরা যেমন বলেন, যার যার ডাইনে চলি ভাই। কথাটা সরাসরি না বলে একটু ঘুরিয়ে বলেন।
হযরত বলেন, একবার টিএন্ডটির একজন অফিসার হযরত মাওলানা মুহাম্মাদল্লাহ হাফেজ্জী হুযুুর রহমাতুল্লাহি আলাইহিকে তার বাসায় দাওয়াত দিলেন। সেখানে মাত্র তিনজন শ্রোতার সামনে হযরত এমনভাবে বয়ান করলেন, যেন হাজার লোকের মাহফিলে বয়ান করছেন। আল্লাহওয়ালাদের নজর থাকে আল্লাহর সন্তুষ্টির দিকে, শ্রোতার সংখ্যার দিকে নয়।
a site based on Islamic lectures of Hazrat Professor Muhammad Hamidur Rahman (DB)